MEET WITH
PRINCIPAL

শ্রীমতী মীনাক্ষী ঘোষ কিশলয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাত্রী ও প্রধানাচার্যা। সুশিক্ষিতা, দৃঢ়চেতা এক ব্যক্তিত্ব। কলেজ পাশ করা অনেক স্বপ্ন ও প্রতিভার এক ব্যক্তিত্ব। নানা প্রতিভার অধিকারিণী তিনি, আবৃত্তি, ভাষ্যপাঠ, সঞ্চালনা, নাটক ইত্যাদিতে তাঁর দক্ষতার নিদর্শন সুপ্রচুর। এবং তাঁর জন্য স্বীকৃতি শুধু দেশেই পাননি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্যেও পেয়েছেন। তিনি দেশে ও বিদেশে সুপরিচিত বেশ কিছু কিংবদন্তী আবৃত্তিকারের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। এই সঞ্চালনা তথা ভাষ্যপাঠের জন্য তিনি গিয়েছেন উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় এবং কলকাতায়।
তবে শুরু থেকেই তাঁর জীবনের গতিপথ মসৃণ ছিল না। নানা বাধা অতিক্রম করে তাকে এতটা পথ হেঁটে আসতে হয়েছে। কিশলয় গড়ে তুলতে সঠিক মার্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তবে সমাজের কল্যাণকর্মে তিনি দৃঢ়চেতা। যতই বাধা আসুক না কেন, বিপত্তিই আসুক না কেন, কিশলয় আদর্শচ্যুত হতে দেননি কখনো, কারণ তিনি কখনোই চাননি এসবের ফলে স্কুলের নিষ্পাপ ছোট ছোট শিশুরা ক্ষতিগ্রস্থ হোক, তারাই দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের গুরুত্ব সমাজে অনস্বীকার্য।
শ্রীমতী ঘোষ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সমান চোখে সকলকে দেখায় বিশ্বাসী। সমাজের ছোট্ট ও আদুরে অংশটিকে তিনি গড়ে তুলতে চান সমাজের ভাবীকাল হিসেবে, শক্তি হিসেবে। তাঁর নেতৃত্ব, পরিচালন ক্ষমতা ও জনসংযোগ এগুলিই হল তাঁর তথা কিশলয়ের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের চাবিকাঠি। এক অনন্য ও পরিচিত ব্যাক্তিত্ব, যার উপস্থিতি শহরের বিবিধ সাংস্কৃতিক উদ্যোগে পরিলক্ষিত, নারী উন্নতির জন্যে তিনি সর্বদা এগিয়ে আসেন। বিপদে-আপদে দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।
মানুষকে একসাথে করে একজায়গায় জড়ো করে আনার ব্যাপারে তিনি সিদ্ধহস্ত। নিজেও তিনি আনন্দময়ী, সবাইকে আনন্দিত থাকতে উদ্বুদ্ধ করেন। যখন ছাত্ররা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় বা সাফল্য পায়, তখন তিনি তাঁর বৃহত্তর সাফল্য অনুভব করেন। তাঁর মতে বর্তমান সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভবিষ্যৎ কখনো প্রতিশ্রুতি দেয় না। যে কারণে তিনি তাঁর সমস্ত শক্তি ও ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন কিশলয়ের জন্য। ভবিষ্যতে তাঁর অবর্তমানে কিশলয় তাঁর আদর্শেই এগিয়ে চলবে নিজ লক্ষ্যের দিকে। তাঁর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে সাথে শিক্ষার জগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রয়ে যাবেন তিনি।
কম বয়স থেকে শ্রীমতী ঘোষ মহৎ কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন এবং তা শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে নয়, জগত সংসারের কথা ভেবে। তাঁর এই স্বপ্নপূরণের জন্য, তাঁর এই আদর্শের জন্য তিনি বেছে নিলেন কিশলয়কে। এই প্রতিষ্ঠান শুরু করলেন এক বৃহত্তর কর্মকান্ড হিসেবে। এইভাবেই কিশলয় শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উঠল। কিশলয় তাঁর কাছে তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের মতন। তিনি একজন মন্তেসরি-শিক্ষণপ্রাপ্তা এবং কিশলয়ে প্রধানাচার্যার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন বিগত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
তিনি নিজে স্বাধীন প্রকৃতির মানুষ, কিন্তু তিনি জানেন কিভাবে বৈষম্যের মধ্যেও একটি বড় দলকে একসাথে কাজ করানো যায় ও তাঁর দ্বারা বড় ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সমাজের জন্য। তিনি বিশ্বাস করেন জীবনে এত সম্ভাবনা আছে সমাজে সুপ্রভাব বিস্তার করার, এক দৃঢ় পদক্ষেপ রাখা উচ্চ আদর্শের দিকে, সমাজকে গড়ে তোলার সঠিক লক্ষ্যের জন্যে। এই ব্রতে তাঁর সঙ্গী শিক্ষকদের প্রতি তা তিনি চিরকৃতজ্ঞ।
যদিও আমাদের প্রধানাচার্যার কর্মকান্ড এখানেই সীমিত নয়। “সৃজনী” নামক এক আবৃত্তির প্রশিক্ষণকেন্দ্র তিনি নিয়মিতভাবে চালান, যেখানে প্রতিনিয়ত প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে তিনি আবৃত্তি শেখান। তাদের মধ্যে শিশু কিশোরী যুবক যুবতী প্রাপ্তবয়স্কও থাকেন। তিনি কিশলয়কে শুরু করেছিলেন দশ জনেরও কম শিক্ষার্থী দিয়ে, ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কিশলয়ের হাজার হাজার কৃতী ছাত্রছাত্রী সমাজের বিভিন্ন স্তরে সসম্মানে অধিষ্ঠিত, কিশলয়ের আদর্শের পথে চলে তাঁরা উন্নতিসাধনে ব্রতী।
শ্রীমতি ঘোষ গর্ব করেন থাকেন যে তিনি কিশলয়ের জন্য সর্বদা সঠিক কর্মীদের নিযুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। একই ব্রতে ব্রতী। শিশুকে পারিবারিক বলয় থেকে শিক্ষার বলয়ে তাদের আপন করে নিতে, সহজ করে নিতে চেষ্টা করে চলেছেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিনি শিশুর পারিবারের আর্থিক বৈষম্যকে প্রশয় দেন না, সবাই যাতে অর্থ নির্বিশেষে সমানভাবে নিজের সন্তানকে শিক্ষা দিতে পারে, সেটাই তাঁর উদ্দেশ্য। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আদর ও ভালবাসার সাথে কাছে টেনে নেওয়া হয়, যত্নের সাথে তাদের বড় করে তোলা হয় এবং এই ভালবাসার বন্ধন অটুট থাকে তাঁরা স্কুল ছেড়ে যাবার পরেও। তিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রাক্তনীদের খুবই ভালোবাসেন।